সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

রূপসার আলাইপুর বিলের জলাবদ্ধতা নিরসন: মাঠে সবুজ ধানের সমারোহ

এস.এম. সাঈদুর রহমান সোহেল, খুলনা ব্যুরো::

খুলনার রূপসা উপজেলার আলাইপুর বিলে এক সময়ের জলাবদ্ধতায় কৃষকের কপালে পড়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কিভাবে ফসল ফলাবেন, রোপনকৃত ফসল কিভাবে ঘরে তুলবেন- এই ভাবনাতেই কাটছিল সময়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের তড়িৎ পদক্ষেপে নিরসন হয়েছে জলাবদ্ধতা, দূর হয়েছে কৃষকের ভাবনা।

এদিকে, জলাবদ্ধতা নিরসন হওয়ায় ওই বিলে এখন সবুজের সমারোহ। বুক চিরে উঁকি দিচ্ছে ধানক্ষেত। এ বিলের চারদিকে এখন শুধু সবুজ ধানের হাসি। এতে এলাকার ৫০টি কৃষক পরিবারে বিরাজ করছে খুশির আমেজ।

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আলাইপুর গ্রামের এই বিলের জমিতে প্রতিবছর প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ হতো। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল ১৫০ হেক্টর, আর ৫০ হেক্টর করে হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের আমন ধান। এ ধানের ওপরই এ গ্রামের অন্তত ৫০টি কৃষক পরিবারের জীবন ও জীবিকা নির্ভর করে। কিন্তু একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে আমন ধানের বীজতলা ও আলাইপুরের বিলের জমি প্লাবিত হয়। বিলে সৃস্টি হয় জলাবদ্ধতার।

স্থানীয় কৃষকদের সূত্র জানান, আলাইপুর গ্রামের উত্তর দিকে অবস্থিত ঘোষের খাল দিয়ে সাধারণত বৃষ্টিপাতের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী গ্রামের জনৈক ব্যক্তি ওই খালের মুখে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করার কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হয়। ফলে আলাইপুর বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে এলাকার কৃষকেরা আমন ধানের চাষ নিয়ে দারুণ চিন্তিত হয়ে পড়েন।

এ অবস্থায় বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কৃষকরা। তার পরামর্শ ও সহযোগিতায় আলাইপুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক মোঃ আঃ কাদের শেখের নেতৃত্বে ৫/৬ জন কৃষক রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার ও উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ফরিদুজ্জামানের শরণাপন্ন হন। এই দুই কর্মকর্তার প্রচেষ্টা ও ভুক্তভোগী কৃষকদের উদ্যোগে উক্ত মাছের ঘেরে পিভিসি পাইপ স্থাপন করে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূর করা হয়।

এদিকে, জলাবদ্ধতা নিরসনের ফলে কৃষকরা নব উদ্যমে আবারও আমন ধানের বীজতলায় বীজ বপণ ও জমিতে চারা রোপণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু জুলাই মাসের শেষের দিকে আবারো প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে পুনরায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কৃষকরা আবারও বিষয়টি রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি অফিসারকে অবহিত করেন। এ দুই কর্মকর্তার নির্দেশে পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মিহির কুমার পালের সহযোগিতায় উক্ত মাছের ঘেরের পাশে নালা কেটে বৃষ্টিপাতের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে ধীরে ধীরে আলাইপুর বিলের জলাবদ্ধতা দূর হয়। কৃষকরা আবারো বিলের জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করেন।

আলাইপুর গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল কাদের শেখ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন হওয়ায় তিনি এ বছর এই বিলে ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করেছেন। একই গ্রামের কৃষক মোঃ লুৎফর রহমান ৫ বিঘা, হাফেজ মোঃ আনোয়ার হোসেন ২ বিঘা, মোঃ অহেদ সরদার ৩ বিঘা, নজরুল মিনা ২ বিঘা, তোরাপ সরদার ৪ বিঘা ও মো: ইসলাম সরদার ৩ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করেছেন বলে জানান। ভালো ফলনের আশায় কৃষকরা এখন ধানের চারাগুলোর নিবিড় পরিচর্যা করছেন বলেও জানান তারা।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহমান বলেন, কৃষকদের একটি বড় সমস্যা উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে সমাধান হয়েছে। এখন ওই বিলে কৃষকদের রোপনকৃত ধানের চারাগুলো কুশি ছেড়ে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। এতে করে মাঠে সবুজ কার্পেটে রূপান্তরিত হয়েছে। বিলের চারদিকে এখন শুধু সবুজ ধানের হাসি।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন হওয়ায় আলাইপুর বিলের জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করতে পেরে কৃষকরা অনেক খুশি। কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষকরা কাঙ্খিত ফলন পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com